Dr. Syama Prasad Mookerjee Research Foundation

ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজমন্ত্র  “বন্দেমাতরম্‌” সঙ্গীতের স্বরূপ ও অর্থ

ভারতবর্ষ,সুপ্রাচীন সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। সহস্রাব্দের পর সহস্রাব্দ সময়ের এক একটি মাইলস্টোন পার করেও ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে বুকে আগলে রেখেছে। বহিরাগত আক্রমন কখনও সে প্রতিহত করেছে,কখনও দু বাহু মেলে তাদের আপন সংস্কৃতির সাথে মিলিয়ে নিয়েছে। বহিরাগতরা হয়েছে আপন,ভারতভূমি তাদের কাছে মাতৃভূমির রূপ নিয়েছে। কবির ভাষায় “শক্ হুনদল মোগল পাঠান একদেহে হলো লীন।”

কালচক্রের গতিতে একসময় এ পূণ্যভূমিতে পা পড়েছে একদল বিদেশী ইংরেজ বণিকের। যারা এদেশের মাটিতে ব্যাবসায়ী সেজে ব্যাবসা করতে এসে ছলনার সাহায্যে এদেশের বুকে বসিয়েছে ছুরি। ব্যাবসায়ী হয়েছে দেশের শাসক, লুঠ করেছে দেশের সম্পদ।” বণিকের মানদন্ড রাজদন্ডে পরিণত হয়েছে।” সোনার ভারতবর্ষ হয়েছে পরাধীনতার শিকল বদ্ধ। সর্বালঙ্কারভূষিতা জগদ্ধাত্রী পরিণত হয়েছেন শ্মশানচারিণী নগ্নিকা মা কালী।

ইংরেজ শাসনের চরম অত্যাচারে ভারতবর্ষের বিভিন্ন  প্রদেশে নেমে এসেছে হাহাকার। বঙ্গদেশে দেখা দিয়েছে দুর্ভিক্ষ – যা ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত। চরম অত্যাচারের বিরুদ্ধে সমগ্র ভারতবাসী বিক্ষিপ্তভাবে বিদ্রোহ ঘোষণা করেও ব্যর্থ হয়, সিপাহী বিদ্রোহ তার উদাহরণ। এক ভূখন্ডে বসবাসকারী মানুষকে এক সূত্রে আবদ্ধ না করতে না পারলে সে ভূখন্ড কখনই দেশ হয়ে ওঠে না। সেই দেশ যদি পরাধীন হয়, তাহলে তার স্বাধীনতা লাভের পথে এগোনোর জন্য জনগণকে এক বলে বলীয়ান হতে হবে। দীক্ষিত হতে হবে এক মন্ত্রে। বাংলা তথা সমগ্র ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সেই মন্ত্র দেন দেশের প্রথম গ্র্যাজুয়েট সাহিত্য সম্রাট ঋষি  বঙ্কিমচন্দ্র  চট্টোপাধ্যায়। আর সে মহামন্ত্রটি হলো ‘আনন্দমঠ’উপন্যাসের  ‘বন্দেমাতরম্’ সঙ্গীত।

ভারতবর্ষের ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসের উদযাপনকালে স্বাধীনতার মূলমন্ত্র “বন্দেমাতরম্” সঙ্গীতের স্বরূপ এবং এর অন্তর্নিহিত অর্থ আলোচিত হলো।

বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বন্দে মাতরম্’ একাধারে স্বদেশমন্ত্র এবং স্বদেশসংগীত। বন্দেমাতরম্ মন্ত্র উচ্চারণ করেই ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিংশ শতাব্দীর প্রভাত- লগ্নে বঙ্কিমচন্দ্রের সপ্তকোটি দেশের মানুষ প্রথম স্বাধীনতা-সংগ্রাম শুরু করেছিল। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম শেষ না হওয়া পর্যন্ত বন্দে মাতরম্’-ই ছিল অখণ্ড ভারতের সমবেত স্বদেশ-সংগীত।

মন্ত্র এবং সংগীত হিসাবে বন্দে মাতরম্-এর যুগল -মহাভাষ্যকার হলেন বিপিনচন্দ্র পাল ও ঋষি অরবিন্দ। বিপিনচন্দ্র পাল-প্রবর্তিত ‘বন্দে মাতরম’ পত্রিকায় ১৯০৭ সালে অরবিন্দ ‘ঋষি বকিমচন্দ্র’ নামে যে নিবন্ধ রচনা করেন,পরে যা পুস্তকাকারে ১৯২৩ সালে প্রকাশিত হয়, তাতে তিনি বলেন :-

Among the Rishis of the later age we have at last realised that we must include the name of the man who gave us the reviving Mantra which is creating a new India, the Mantra BandeMataram.

…The religion of patriotism,–this is the master idea of Bankim’s writings……..Of the new spirit which is leading the nation to resurgence and independence, he is the inspirer and political Guru.

……….The third and supreme service of Bankim to his nation was that he gave us the vision of our Mother.১

অরবিন্দ যাকে বলেছেন ‘vision of our Mother’, তার পূর্ণ প্রকাশ ঘটেছে ‘বন্দে মাতরম্’ সংগীতে।

১২৮৭ বঙ্গাব্দের চৈত্র ( এপ্রিল,১৮৮১) সংখ্যা থেকে ১২৮৯ জ্যৈষ্ঠ (মে,১৮৮২) সংখ্যা পর্যন্ত  ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসটি  ধারাবাহিকভাবে বঙ্গদর্শনে প্রকাশিত হয়। ১৮৮২ সালের ১৫ ই ডিসেম্বর  কলকাতা জনসন প্রেসে শ্রীরাধানাথ বন্দোপাধ্যায় কর্তৃক মুদ্রিত হয়ে  পুস্তকাকারে ” আনন্দমঠ”- এর প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এই মহা উপন্যাস ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কাছে হয়ে ওঠে গীতা। আর এই উপন্যাসে ব্যবহৃত মহাসঙ্গীতটি হয় তাঁদের বীজমন্ত্র। কতশত বিপ্লবী হাসতে হাসতে ফাঁসীর দড়ি গলায় পরেছেন, শত শত বেতের আঘাতেও দৃপ্তকণ্ঠে উচ্চারণ করে গিয়েছেন “বন্দেমাতরম্ “। এমনই সম্মোহনী  শক্তি এই মহামন্ত্রের।

আনন্দমঠে অঙ্গীভূত হওয়ার ফলে বন্দেমাতরম্, আনন্দমঠের প্রাণমন্ত্র হয়ে উঠেছে। তবে, একথা সর্বদাই স্মরণ রাখতে হবে, ‘বন্দেমাতরম্’ আনন্দমঠের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ নয়। তবে ‘বন্দেমাতরম্’ সংগীতে যে স্বদেশমন্ত্র উদগীত হয়েছে, অরবিন্দের ভাষায়—যে religion of patriotism’ বঙ্কিম-চন্দ্রের রচনাবলীর মুখ্য উপজীব্য, তারই উদ্দীপক শিল্পরপ ‘আনন্দমঠ’। আর, একথা অবশ্যই স্বীকার্য যে, বঙ্কিমচন্দ্রের বহু উপন্যাসের কাহিনী অতীতাশ্রয়ী হলেও তাঁর ঋষিদৃষ্টি ভবিষ্যতের দিকে সম্প্রসারিত। বঙ্কিমচন্দ্র স্বদেশ-উদ্ধারের জন্য যে সন্তান সম্প্রদায় সষ্টি করলেন তা অতীতের সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের ঐতিহাসিক কাহিনীর উপরই নির্ভর করে পরিকল্পিত হয়েছে কিন্তু, ‘আনন্দমঠে’ই তাঁর বক্তব্য শেষ হয় নি। সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের কাহিনী নির্ভর তাঁর দ্বিতীয় সৃষ্টি ‘দেবী চৌধুরাণী’। আনন্দমঠের প্রথম সংস্করণের পাঠভেদে দেখা যায়, গ্রন্থশেষে বঙ্কিমচন্দ্র বলছেন, “বিষ্ণু- মণ্ডপ জনশূন্য হইল। তখন সহসা সেই বিষ্ণুমণ্ডপের  দীপ উজ্জ্বলতর হইয়া উঠিল ; নিবিল না। সত্যানন্দ যে আগুন জ্বালিয়া গিয়াছিলেন তাহা সহজে নিবিল না। পারি ত সে কথা পরে বলিব।”

 প্রথম সংস্করণের পরে এই অংশ উপন্যাস থেকে বর্জিত হয়েছে। প্রাবন্ধিক জগদীশ ভট্টাচার্যের মতে, ‘পারি ত সে কথা পরে বলিব’-বঙ্কিমচন্দ্রের এইপ্রতিশ্রুতিই শিল্পরূপ পেয়েছে ‘দেবী চৌধুরাণী’তে।” অর্থাৎ বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর বন্দেমাতরম্ সংগীতে যে স্বদেশপ্রেমের ধ্যান করেছেন সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে তার যুগল শিল্পরূপ হলো আনন্দমঠ ও দেবী চৌধুরাণী। এই সিদ্ধান্ত স্বীকার করে নিয়েও বলতে হয়, বন্দেমাতরম্, আনন্দমঠের অঙ্গীভূত হলেও তা কবি বঙ্কিমচন্দ্রের একটিস্বতন্ত্র সৃষ্টি, একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ স্বদেশসংগীত। অরবিন্দের ভাষায়-‘The vision of our Mother’.

এখন প্রশ্ন হলো বন্দেমাতরম্ সঙ্গীত অথবা ধ্বনির তাৎপর্য কি? এই গীত কি রাজদ্রোহদ্দীপক অথবা দেশ মাতৃকার উদ্দেশ্যে ভক্তিগীতি, না কি হিন্দু দেব-দেবীর বন্দনা? বন্দেমাতরম্ কি রণধ্বনি না অন্য কিছু? এই সঙ্গীত নিয়ে নানা জনে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যত লেখালিখি করেছেন, অন্য কোন গীত নিয়ে তা কখনও হয়নি। বন্দেমাতরম্ – এর অর্থ নিয়ে সুদূর ইংলন্ডের মাটিতেও একদিন উঠেছিল মহাঝড়।২

‘বন্দে মাতরম্‘-এর স্বরূপ ঃ

এবারে প্রশ্ন  ‘বন্দে মাতরম্ সংগীত বা ধ্বনির তাৎপর্য কী?  ‘বন্দে মাতরম্’ কি রাজদ্রোহদ্দীপক অথবা দেশমাতৃকার উদ্দেশ্যে ভক্তিগীতি বা হিন্দু দেবদেবী বন্দনা?

‘বন্দে মাতরম্’ কি রণধ্বনি বা অন্যকিছু? ‘বন্দে মাতরম্’-এর অর্থ নিয়ে নানা মতভেদ আছে এবং এই সংগীত সম্পর্কে আজ পর্যন্ত যত লেখালেখি হয়েছে সম্ভবত পৃথিবীর আর কোনাে সংগীত সম্পর্কেই তা হয় নি। ‘বন্দে মাতরম্’-এর অর্থ নিয়ে সুদূর ইংল্যান্ডের মাটিতেও একদিন ঝড় উঠেছিল।

১৯০৬ সালে (১৩১৩ বঙ্গাব্দে) হায়দ্রাবাদের ‘ডেকান টাইমস্’ পত্রিকার বাঙালি সম্পাদক সিদ্ধমােহন মিত্র বিলেতের ‘টাইমস্’ পত্রিকায় লেখেন : “বন্দে মাতরম্ ফ্রান্সের জাতীয় সংগীত মাসেইলজের’ (‘La Marseillaise’) বাংলা সংস্করণ।” স্বাধীনতাপ্রিয় ও গণতন্ত্র-শাসনপ্রয়াসী ফরাসি যুবকদের রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করার উদ্দেশ্যেই মার্সেইলজ’ রচিত হয়। এতে উত্তেজনাপূর্ণ কতকগুলি শব্দ যােগ করে এবং সহজবোধ্য দেশপরিচিত কতকগুলি ভাবের বিন্যাস ঘটিয়ে লোককে মাতাবার চেষ্টা করা হয়। ফরাসি বিদ্রোহের কালে (১৭৯২ খ্রিঃ) Rouget de Lisle নামে এক ফরাসি সৈনিক ১৭৯২ সালের ২৪-২৫ এপ্রিল এটি রচনা করেন। এই সংগীতের শুরুতে বলা হচ্ছেঃ-

ফরাসি সন্তান, জাগো জাগো। তোমাদের পুত্রকলত্র পিতৃপিতামহের অশ্রুধারা ঘুচাও। ওই শোেন, তাদের করুণ ক্রন্দন। ঘৃণিত অত্যাচারীর দল তোমাদের দেশ পদদলিত করছে, শান্তি ও স্বাধীনতা আজ শোণিতলিপ্ত হয়ে ম্রিয়মান ; তোমরা কি নিশ্চিন্তে বসে থাকবে? হে বীরেরা সাজো সাজো নিষ্কোশিত করো তোমাদের শাণিত তরবারি, প্রতিহিংসা নাও।  দৃঢ়পদে আগুয়ান হও, জয় হোক, মৃত্যু হোক।

জগদ্বিখ্যাত এই সংগীতের মধ্যে শুধু বিদ্রোহ, বিপ্লব, জ্বলন্ত প্রতিহিংসার শিখা এবং উন্মত্ত শোণিতলিপ্সা। অতি অল্প সময়ের মধ্যে সমগ্র ফ্রান্সে এই সংগীত এক অদ্ভুত উন্মাদনা সৃষ্টি করে। বিশিষ্ট ফরাসি রাজনীতিক লা মার্টিন-এর মতে “It was the fire-water of the Revolution, which instilled into the sense and soul of the people the intoxication of battle.”—এটি হল বিপ্লবের অগ্নিপ্রবাহ যা মানুষের চেতনা ও আত্মায় যুদ্ধের মদিরা এনে দেয়। এই সংগীতকে কার্লাইল বলছেন—“the luckiest musical composition ever promulgated, the sound of which will make the blood tingle in men’s veins, and the whole armies and assemblages will sing it with eyes weeping and burning, with hearts defiant of Death, Despot and Devil.”৩

যাই হোক, ‘বন্দেমাতরম্’ সম্পর্কে সিদ্ধমোহনবাবুর মন্তব্য নিয়ে দেশ-বিদেশে ঝড় ওঠে। ভারতে ইংরেজ সম্প্রদায়ের অন্যতম মুখপত্র এলাহাবাদের ‘পাইওনিয়ার’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক সম্পাদকীয় প্রবন্ধে সিদ্ধমােহনবাবুর এই মন্তব্যের প্রতিবাদ করা হয়। সুরেশচন্দ্র সমাজপতি সম্পাদিত সাহিত্য পত্রিকায় পাইওনিয়ার’-এ প্রকাশিত প্রবন্ধেরবক্তব্যটি প্রকাশিত হয়।৪ ‘পাইওনিয়ার’-এর মতে-

“কবিতা হিসাবে ও রচনা পারিপাট্যে ‘বন্দে মাতরম্’ ফরাসি জাতীয় সংগীতের তুলনায় অনেক উচ্চে অবস্থিত। মার্সেইলজ’ বিদ্রোহদ্দীপক ও শাসনশৃঙ্খলচ্ছেদক ; ‘বন্দে মাতরম্’ ‘কর্মপ্রবর্তক ও ভক্তিমূলক। প্রথমটি ভাবােন্মাদনার প্রবর্তক, দ্বিতীয়টি ভাবপ্রবণতার নিদর্শক। প্রথমটিতে আত্মদৃষ্টি নেই, পর পরকে নাচায়—সমাজকে নাচায়—নিজের দিকে দেখে না। ‘বন্দে মাতরম্’ অন্তদৃষ্টিপূর্ণ ; এর গায়ক আপনার ভাবে আপনি মুগ্ধ হয়ে মর্মেরকথার পরিচয় দেন ; শ্রোতা শুনে নিজের দিকে চান এবং নিজ কর্মহীনতার পরিচয় উপলব্ধি করে মর্মান্তিক বেদনায় উদভ্রান্ত হয়ে গায়কের সুরে সুর মিশিয়ে গান করেন। মার্সেইলজ’ শ্রোতার কর্ণে অহংকারের মদিরাধারা ঢেলে তাকে বিহ্বল করে তােলে। ‘বন্দে মাতরম্’ উপাসনার—প্রার্থনার সুধায় শ্রোতৃবৃন্দকে পূত ও উন্নত করে। মার্সেইলজ’-এ কবির হৃদয় নেই ; বন্দে মাতরম্ সংগীতে কবি যেন আপনার আত্মা ঢেলে দিয়েছেন। দুইয়ের মধ্যে এত প্রভেদ। ‘বন্দে মাতরম্’ জাতির উদ্গত প্রার্থনা- আদ্যাশক্তিকে স্বদেশের আধারে প্রতিষ্ঠিত করে “মা” বলে তার উপাসনা, অপরূপা শক্তির স্বরূপ নির্দেশ করে জন্মভূমির জননী ও শক্তিরূপিনী জননীকে এক করে ‘বন্দে মাতরম্’ বাঙালিকে প্রকৃত বাঙালি হতে বলছে। এটা রাজদ্রোহও নয়—প্রজার মনে বিদ্বেষ-বপনের চেষ্টাও নয়।

‘আনন্দ মঠ’ বিদ্রোহের উপকথা (অর্থাৎ এর আখ্যানবস্তু বিদ্রোহ) হলেও বিদ্রোহের উপন্যাস নয়। এই গ্রন্থ কেবল হিন্দুর সমাজ ও ধর্মের উন্নতির পথ নির্দেশ করেছে। কোন পথে পুরুষকারের বিকাশ ঘটালে, কোন্ সাধনায় সিদ্ধ হলে হিন্দুর ঐহিক ও পারত্রিক উন্নতি অবশ্যম্ভাবী ‘আনন্দ মঠ’ তাই শিক্ষা দেয়।”

চরমপন্থী রাজনীতির অন্যতম প্রবর্তক ও বঙ্গীয় বিপ্লববাদের প্রধান পুরোহিত অরবিন্দ ঘোষ ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জানুয়ারি বেরারের অমরাবতীতে এক ভাষণে বলেন যে,’বন্দে মাতরম্’ গান নয়—মন্ত্র। তার মতেঃ ইউরােপীয়রা যাকে জাতীয় সংগীত’বন্দে মাতরম্’ সে ধরনের জাতীয় সংগীত নয়—’বন্দে মাতরম্’ হল বিরাট শক্তিতে পূর্ণ একটি মন্ত্র।  (“The song… was not only a national anthem to be looked on as the European nations look upon their own, but one replete with mightypower, being a sacred mantra, revealed to us by the author of Ananda Math, who might be called an inspired Rishi”)।৫

প্রাচ্য ভাষাবিদ বলে খ্যাত ডক্টর জি. এ. গ্রিয়ারসনের (The Times, 12 Sept. 196) মতে—হিন্দুধর্মের কোনাে দেবীর উদ্দেশে—“মৃত্যু ও সংহারের দেবী কালীর’ (“the goddess of death and destruction”) উদ্দেশেই এ গান লিখিত হয়েছে। তাঁর মতে,’বন্দে মাতরম্’-এর ‘মাতা’ কোনােক্রমেই দেশজননী হতে পারেন না, কারণ মাতৃভূমির ভাবনা হিন্দুদের কাছে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত (“The idea of a ‘motherland’ is wholly alien to Hindu ideas”)। এ সম্পর্কে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।

হেনরি কটন (The Times, 13 Sept. 1906) গ্রিয়ারসনের উক্তির প্রতিবাদ করে বলেন যে, ‘বন্দে মাতরম্ ‘সংগীতটি জননী বঙ্গভূমির প্রতি আহ্বান।

জি. ডি. অ্যাণ্ডারসনের (The Times, 24 Sept 1906) মতে আনন্দ মঠ’-এর প্রথম খণ্ড একাদশ পরিচ্ছেদে দেখা যাচ্ছে যে, বিদ্রোহী সন্ন্যাসীরা কালী প্রতিমার উদ্দেশে বলছে,’ মা যা হয়েছেন’, আর একটি মর্মর নির্মিত প্রতিমাকে দেখিয়ে বলছে, ‘মা যা হবেন।’ ‘বন্দে মাতরম্’ স্তোত্র এই দুই প্রতিমাকে উদ্দেশ্য করেই লেখা হয়েছে।

লণ্ডন টাইমস্ -এর বিশেষ সংবাদদাতা ভ্যালেন্টাইন চিরল (Valentine Chirol) ‘বন্দে মাতরম্’ ধ্বনির মধ্যে কালীর গৌরব ঘােষণাই শুনতে পেলেন। তিনি লিখছেন-

“কালীমাতার পুরোনো সম্বোধন ‘বন্দে মাতরম্’ একটা নতুন তাৎপর্য লাভ করলো এবং এই ধ্বনিকে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক যুদ্ধধ্বনিরূপে ব্যবহার করা হলো।”

(“By partitioning Bengal he had struck both at the dignity of the Bengalee ‘nation’ and at the nationhood of the Indian Motherland, in whose honour the old invocation of the goddess Kali, “BandeMataram”, or “Hail to the Mother” acquired a new significance and came to be used as the political war-cry of Indian nationalism. To that war-cry public meetings were or- ganised in Calcutta and all over the province.”)। ৬

১৯২০ খ্রিস্টাব্দে প্রাক্তন রাজকর্মচারী ভারনি লােভেট (Verney Lovett)’ বন্দে মাতরম’কে ‘মার্সেইলজ’ গীতের সঙ্গে তুলনা করে বলেন যে, আনন্দ মঠ’ উপন্যাস থেকে বোঝা যায় যে, জন্মভূমিকে নয়—সন্ন্যাসীরা মায়ের ভূমি, মা   কালীর ভূমিকে আবাহন জানিয়েছিল।৭

পদস্থ ইংরেজ রাজকর্মচারী জেমস্ ক্যাম্পবেল কার (James Campbell Ker, I.C.S) ‘Political Trouble in India 1907-1917 নামক গোপন সরকারি রিপোর্টে লিখছেন ‘আনন্দ মঠ’-এর সন্তানেরা একে অন্যকে ‘বন্দে মাতরম্’ (“মা, তােমার বন্দনা করি’) বলে সম্ভাষণ জানাতো এবং তাদের দীক্ষাগ্রহণ অনুষ্ঠানের একটি অংশ ছিল ‘বন্দেমাতরম্’ সংগীত গাওয়া, যার মধ্য দিয়ে মাতৃভূমির প্রশংসাই ধ্বনিত হতো।….  ‘বন্দে মাতরম্’ বাংলার চরমপন্থী দলের রণধ্বনিতে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক সভা-সমিতিতে জনপ্রিয় নেতাদের স্বাগত জানানো, তাদের বক্তৃতার বিশেষ বিশেষ উত্তেজক অংশের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন এবং অনেক সময় পথে-ঘাটে ইউরোপীয়দের প্রতি অবজ্ঞা বা নিন্দাসূচক ধ্বনি হিসেবে ‘বন্দে মাতরম্’ ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশে প্রায়ই ‘বন্দে মাতরম্‌’ গাওয়া হয়। বাংলা জাতীয়তাবাদী সংবাদপত্রগুলি যদিও সর্বদাই বলে থাকে যে, বন্দে মাতরম্’ ধ্বনির মধ্যে ক্ষতিকারক কিছু নেই এবং এর অর্থ মা, তোমার বন্দনা করি’, তবুও এটা মানতেই হবে যে এই ধ্বনি বিপ্লবের প্রতি সহানুভূতি এবং সরকারের প্রতি অবজ্ঞার নিদর্শন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।” (“….The Children greeted one another with thewords “BandeMataram” (Hail ! Mother) and part of the initiation ceremony was to sing the BandeMataram song, a song in praise of the Motherland… …. The greeting “BandeMataram” become the war-cry of theextremist party in Bengal ; it was raised at political meetings to welcome popular leaders and to express approval of particularly exciting passages in their speeches, and also occasionally as a shout of defiance of Europeans in the streets. The BandeMataram song was also very frequently sung at political gatherings. It was of course invariably represented by theBengali nationalist press that the cry of “BandeMataram”, as it meantnothing more than “Hail ! Mother,” must be perfectly harmless ; but although the words are harmless enough they were used as an outward sign of sympatlywith revolution and defiance of Government.”—(Political Trouble in India 1907-1917, 1973, P. 30)।

রমেশচন্দ্র দত্তের মতে, বন্দে মাতরম্’ কবিতাটি একজন আদর্শবাদী হিন্দুর রচনা, যিনি বাংলাদেশের ওপর কালী মূর্তির পবিত্রতা ও আধ্যাত্মিকতা আরোপ করেছেন।৮

১৯০৬ সালের ১৮ নভেম্বর তিলকের সভাপতিত্বে বােম্বাই নগরীতে অনুষ্ঠিত এক বক্তৃতায় সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন—“ বন্দে মাতরম্ আমাদের জাতীয় ধ্বনি—ভারতের বিভিন্ন গোষ্ঠীসমূহের মধ্যে শান্তি শুভেচ্ছা ও সহযােগিতার ধ্বনি—রণধ্বনি নয়।

ইংরেজের বিরুদ্ধে জয়লাভের জন্য মা কালীর কাছে এটা আমাদের আক্রমণাত্মক আবেদনও নয় বরং এটা একটা শান্ত, উদার এবং প্রবল দেশপ্রেমজনিত ভাবোচ্ছ্বাস যা আমাদের জন্মভূমির প্রতি আমাদের মহান কর্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়… দেশমাতৃকার সেবার জন্য ভারতের বিভিন্ন মানবগোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্য সাধনের উদ্দেশ্যে ‘বন্দে মাতরম্’ আরেকটি উপাদান।”৯

প্রখ্যাত মনীষী বিনয়কুমার সরকারের মতে, “ ‘বন্দে মাতরম্’ মন্ত্রের দেবী মামুলি হিন্দু দেবী-দেবীর অন্যতম নন। এই দেবী জলমাটির দেবী, পাহাড়ের দেবী, নদ-নদীর দেবী, দেশ-দেবী, বাঙলা দেশ। নয়া আধ্যাত্মিকতার ফোআরা ছুটছে এই মন্তর থেকে। অথচ ইহার ভিতর বেদ-পুরাণ-তন্ত্রের নামগন্ধ নাই। ‘বন্দে মাতরম্ অহিন্দু আধ্যাত্মিকতার মন্তর,ভক্তিমার্গী নাস্তিকতার সুরা’। এই মন্ত্রে কঁৎ-পন্থী বঙ্কিম দর্শনের সমাজসেবা বা মানব-পূজা সরস মূর্তি পেয়েছে। স্বদেশপূজা প্রবর্তক বঙ্কিম নবীন অধ্যাত্ম জীবনের ভগীরথ।”১০

অনুশীলন সমিতির প্রখ্যাত বিপ্লবী নায়ক শ্রীনরেন্দ্রনাথ শেঠের মতে, ‘বন্দে মাতরম্ হল দেশবন্দনা গীত এবং এর মাধ্যমে “চিন্ময়ী মাতার সগুণ সাকার কল্পনা গানে মূর্ত হয়ে উঠেছে।১১

বাঙলার স্বদেশি আন্দোলনের ইতিহাস চর্চার দুই পথিকৃৎ অধ্যাপিকা উমা মুখোপাধ্যায়ও অধ্যাপক হরিদাস মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছে যে, কালীমাতার পূজার উদ্দেশ্যে কখনওবন্দে মাতরম্ ধ্বনি উচ্চারিত হয় নি বা ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের যুদ্ধধ্বনিতেও কখনো তা পরিণত হয় নি। তাদের মতে, ‘বন্দে মাতরম্’ হল মাতৃপূজার মন্ত্র এবং সেই মাতা হলেন দেশজননী।১২

বন্দে মাতরম্’ দেশবন্দনা ঠিকই, কিন্তু সমগ্র ‘আনন্দ মঠ’ উপন্যাসটি পাঠ করে একথা দৃঢ়তার সঙ্গেই বলা চলে যে, এই দেশমাতৃকা জগন্মাতা কালী থেকে পৃথক নন। বিপিনচন্দ্র পাল বলছেন যে, ‘আনন্দ মঠ’ উপন্যাসে কালী ও তার বিভিন্ন রূপ ও প্রকাশ, যথাজগদ্ধাত্রী, দুর্গা, ভবানী প্রভৃতি দেবদেবী মাতৃভূমি এবং জাতীয় চেতনার প্রতীক রূপে ব্যবহৃত হয়েছেন ১৩। ১৩১৬ বঙ্গাব্দে অরবিন্দ ঘােষ সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘ধর্ম্ম’ পত্রিকায় (১১-২৫ মাঘ, ২১-২৩ সংখ্যা) বিপিনচন্দ্র পাল বন্দে মাতরম্ সংগীতের এক অনবদ্য ভাষ্য রচনা করেন। তিনি বলেন :

“বন্দে মাতরম্‌—গান নহে, মন্ত্র। প্রত্যেক মন্ত্রের একজন ঋষি, ও এক বা ততোধিক দেবতা থাকেন। ‘বন্দে মাতরম্’মন্ত্রের ঋষি সন্তান – সম্প্রদায়-প্রবর্তক মহাপুরুষ, পুরোহিত বঙ্কিমচন্দ্র, দেবতা জন্মভূমি। মন্ত্র অনেক সময় স্বল্পবর্ণাত্মক হয়। বিশেষ যে মন্ত্র সাধনা করিতে হয়, যে মন্ত্র সাধকের জপমন্ত্র হইবে, সাধক যাহা নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে, শয়নে স্বপনে জপিবেন,-জপিতে জপিতে তন্ময় হইয়া, আপনাকে সেই মন্ত্রের অগাধ রসে একেবারেডুবাইয়া রাখিবেন, এমন সিদ্ধমন্ত্র প্রায়ই অতি সংক্ষিপ্ত, অতি স্বল্পপরিসর হওয়া আবশ্যক।

‘বন্দে মাতরম্’ এই শব্দ দুটিই এজন্য প্রকৃত মন্ত্র। যে শক্তিশালী সঙ্গীতের শিরােভাগে ইহা প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে, তাহার সমগ্ৰটা মন্ত্র নহে।…’বন্দে মাতরম্’ মন্ত্র ; কারণ এই মন্ত্র ভক্তিভরে জপ করিলে মায়ের স্বরূপ চিত্তে উদ্ভাসিত হইয়া উঠে।

“এই মন্ত্র জপিতে জপিতে, যে মাতৃরূপ সাধকের মানসচক্ষে মন্ত্রশক্তি প্রভাবে, গুরুকৃপায়, আপনি স্ফুরিত হইয়াছিল বঙ্কিমচন্দ্র এই সঞ্জীবনী সঙ্গীতে তারই বর্ণনা করিয়াছে। ‘বন্দে মাতরম্’ সঙ্গীত মায়ের সাধনমন্ত্র নহে, মায়ের স্তব। স্তব ও মন্ত্রে প্রভেদঅনেক।…মন্ত্র অন্তরঙ্গ সাধন, স্তব বহিরঙ্গ সাধন, মন্ত্র সূত্র, স্তব বৃত্তি। ‘বন্দে মাতরম্’ মায়ের সাধনমন্ত্র ; সুজলাং সুফলাং ইত্যাদি মায়ের স্তব। মন্ত্রপ্রভাবে দেবতা প্রকাশিত হইলে স্তব সেই প্রকাশের ছবি আঁকিয়া, তাঁহার রূপ-গুণের বর্ণনা করে। বন্দে মাতরম্ জপিতে জপিতে, সাধকের চক্ষে যখন “মা” প্রকট হইলেন, তখনই তাহার বন্দনা আরম্ভ হইল।

তখনই সাধক মায়ের অরূপরূপ প্রত্যক্ষ করিয়া ভক্তিগদগদ কণ্ঠে গাহিতে লাগিলেন—সুজলাং সুফলাং মলয়জশীতলাং শস্যশ্যামলাং মাতরম্।”

তাঁর মতে ‘বন্দে মাতরম্ “কেবল সঙ্গীতের পদ নহে, কেবল কল্পনা বা কবিতা নহে; কিন্তু মায়ের সাধনমন্ত্র, মায়ের স্বরূপের সঙ্কেত, মায়ের স্মারক-চিহ্ন।”১৪

বিপ্লবী অনুশীলন সমিতির ইতিহাসকার প্রবীণ বিপ্লবী শ্রীজীবনতারা হালদার জানান যে—“বন্দে মাতরম্” সে যুগে আমাদের কাছে ছিল রণ-হুংকার—battle-cry। তখন এই গানের সুরটিও ছিল তেজস্বিনী বীরত্বব্যঞ্জক।…তার মধ্যে একটা উন্মাদনা ছিল।”১৫

বঙ্কিম-ভ্রাতুস্পুত্র শচীশচন্দ্রের মতে ‘বন্দে মাতরম্ হল আরাধ্যা দেবীর পূজার মন্ত্র। তিনি বলছে—“বঙ্কিমচন্দ্র কোনও দিন মনে স্থান দেন নাই যে, তাঁহার আরাধ্যা দেবীর পূজার মন্ত্র একদিন নরঘাতী বর্বরদের মুখে ধ্বনিত হইবে ;কিন্তু তিনি ইহা বেশ জানিতেন, একদিন না একদিন বন্দে মাতরম্ মন্ত্র বাঙ্গালীর কণ্ঠে ভক্তিপূর্বক ধ্বনিত হইয়া বাঙ্গালায়নূতন জীবন আনিবেন-নূতন শক্তি সঞ্চারিত করিবে।১৬

”বঙ্কিমের ক্ষণভিন্ন বন্ধু দীনবন্ধু মিত্রের পুত্র শ্রীললিতচন্দ্র মিত্র জানাচ্ছেন যে, “’বন্দে মাতরম্’গানের ভিতর বিদ্রোহ-বহ্নির ধূম নাই—সংহারকত্রী কালীরও আবাহন নাই ; গানটি জন্মভূমির স্তোত্র মাত্র। জন্মভূমিকে জননীরূপে—আরাধ্যা দেবীরূপে—সব্বৈৰ্শৰ্য্যময়ী সৰ্ব্বক্ষমতাময়ী প্রকৃতিরূপে কল্পনা করিয়া কবি তাহার আবাহন গাহিতেছেন।”১৭

বলাবাহুল্য, ‘আনন্দ মঠ উপন্যাসের সন্তানদলের কণ্ঠে ‘বন্দে মাতরম্’ কেবলমাত্র দেশবন্দনা রূপেই উচ্চারিত হয় নি—যুদ্ধক্ষেত্রে রণসংগীতরূপেও তা ব্যবহৃত হয়েছে। ‘আনন্দ মঠ’-এ প্রতিষ্ঠিত দেবীমূর্তিকে প্রণামের কালে বা নতুন কোনাে সন্তানের দীক্ষা গ্রহণকালে যেমন তাঁরা ‘বন্দে মাতরম্’ উচ্চারণ করেছেন, তেমনি কখনো বা তাসম্ভাষণবাণী, জয়ধ্বনি, আনন্দধ্বনি বা রণনিনাদরূপে ধ্বনিত হয়েছে, আবার মৃত্যুশয্যাতে।—এমনকি শব-সৎকার কালেও তারা উচ্চারণ করেছে—’বন্দে মাতরম্’।

সুতরাং ভাবাবেগ ত্যাগ করে সত্যনিষ্ঠভাবে বলতে বাধা নেই যে, ‘আনন্দ মঠ’-এর অন্তর্ভুক্ত ‘বন্দে মাতরম্’ সংগীতকে কেবলমাত্র মাতৃবন্দনাগীতি বললেই হবে না—’বন্দে মাতরম্’ একাধারে দেশবন্দনা গীতি, মাতৃবন্দনা গীতি, জয়ধ্বনি, বিজয় সংগীত, রণধ্বনি, রণহুংকার এবং মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার মাভৈঃ মন্ত্র। শ্রীহট্টের বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামীনীরদ কুমার গুপ্ত লিখছেন—“স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় যখনই দুর্বলতা অনুভব করেছি,তখনই ‘বন্দে মাতরম’ মন্ত্র উচ্চারণ করায় দেহে ও মনে নূতন বলের সঞ্চার হয়েছে। বিপদের সম্মুখীন হলে ‘বন্দে মাতরম্’ ধ্বনি করার সঙ্গে সঙ্গে সাহস এসেছে এবং বিপদকে বিপদ বলে গণ্য করি নাই। পুলিশ বা মিলিটারী জোর করে সভা অথবা শোভাযাত্রা ভেঙ্গেদিতে এসেছে, আমরা ‘বন্দে মাতরম্’ ধ্বনি করেছি। এই দিক থেকে বিচার করলে ‘বন্দেমাতরম্’ ছিল আমাদের War-cry বা যুদ্ধধ্বনি। জেলেও যখনই রাজবন্দীরা অত্যাচারিত হয়েছে, তখনই উচ্চৈঃস্বরে ‘বন্দে মাতরম্’ ধ্বনি করেছেন। এককথায় ‘বন্দে মাতরম্ ছিল আমাদের কাছে কতকটা ইষ্ট মন্ত্রেরই মত।”১৮ বলাবাহুল্য, জাতীয় মুক্তি সংগ্রামেরইতিহাসে ‘বন্দে মাতরম্’-এর এ ধরনের ব্যবহারের ব্যত্যয় হয় নি। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে “ফরাসি বিদ্রোহে লা মার্সেলিজ’ নামক বিখ্যাত জাতীয় সংগীত যে প্রভাব বিস্তার করিয়াছিল আনন্দমঠের ‘বন্দে মাতরম্’ সঙ্গীত তাহার সহিত সর্বথা তুলনীয়।”১৯ পৃথকভাবে ‘বন্দে মাতরম্’ পাঠ করলে মনে একটি শান্ত ও সমাহিত ভাবজাগলেও, জাতীয় আন্দোলনের রক্তরাঙা দিনগুলিতে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কাছে তা ছিল।মার্সেলিজ’ সংগীতের মতোই ‘বিদ্রোহদ্দীপক ও শাসনশৃঙ্খলচ্ছেদক’ এবং সমগ্র জাতিরওপরেই তা প্রবল উত্তেজক মাদকের মতাে কাজ করেছিল—এ বাস্তব সত্য।

বন্দে মাতরম্সংগীতের অর্থ :‘বন্দে মাতরম্’ হল মাতৃবন্দনার মহাসংগীত এবং এই মাতা হলেন নিঃসন্দেহে জননী জন্মভূমি দেশমাতৃকা,—মাতৃভক্ত সন্তানের একমাত্র আরাধ্যা- যাঁর মধ্যে দশপ্রহরণধারিণী দুর্গার শক্তি, কমলদলবিহারিণী কমলার বৈভব ও বিদ্যাদায়িনী বাণীর জ্ঞানৈশ্বর্যের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটে যিনি মহা মহীয়ান হয়ে উঠেছেন। মাতৃভক্ত সন্তানের কল্পনায় শক্তি, সম্পদ ও বিদ্যার অপূর্ব সমন্বয়ে গঠিত তিলােত্তমার মতো তিনি এক নতুন সৃষ্টি, সকল দেবতার বিশেষ গুণাবলির মিলন ঘটেছে তার মধ্যে, কিন্তু বিশেষ কোনাে দেবতার মধ্যে তিনি নিজেকে বিলীন করে দেন নি। এই মাতৃমূর্তির পরিকল্পনা বঙ্কিমের সম্পূর্ণ নিজস্ব। নবভারতের মাতৃরূপকে সর্বজন সমক্ষে স্পষ্টতর করে তােলবার উদ্দেশ্যেই হিন্দু দেবদেবীর গুণাবলি তাতে আরােপ করে বঙ্কিমচন্দ্র দেশমাতৃকাকে নবভারতের একমাত্র ঈশ্বরে রূপান্তরিত করেছেন। এই মাতৃসংগীতে কেবলমাত্র মায়ের গুণাবলিই বর্ণিত হয়নি—মায়ের রূপ, সৌন্দর্য, চিন্ময়ী সত্তা, ঐশীশক্তি, বিশ্বপ্রীতি পরিস্ফুট হয়ে সন্তান, নিখিল বিশ্ব ও ধরিত্রীর পালক জগজ্জননীর সঙ্গে তার একাত্মতা বিধৃত হয়ে ‘বন্দে মাতরম্’-কে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ও মহত্তম দেশবন্দনা গীতিতে পরিণত করেছে। ভাব, ভাষা, চিন্তার ঐশ্বর্য ও গভীরতা, হৃদয়ের ঔদার্য ও ভক্তিপরায়ণতা এবং বর্ণনার ব্যাপকতায় বন্দে মাতরম্ এক অনন্য সৃষ্টি—সমগ্র বিশ্বের ইতিহাসে এর কোনো তুলনা নেই।

বন্দে মাতরম্ সংগীতের প্রথম অংশে দেশমাতৃকার বাহ্যরূপ বর্ণনা করা হয়েছে—দেশের জল, ফল, স্নিগ্ধবায়ু এবং শস্য-শ্যামলক্ষেত্রে মাতা প্রকাশমান। জ্যোৎস্নাময় রাত্রিতে তিনি হাস্যময়ী, বনের মর্মর ও বিহঙ্গের কলতানে তিনি কলহাস্যমুখরা, কাননের ফুল্লকুসুম ও দ্রুমদল দ্বারা তিনি সুশোভিত। দেশের এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মা হলেন সুহাসিনী,  সুমধুরভাষিণী। তিনি সুখদা ও বরদা—সর্বকল্যাণময়ী। দেশ ও সন্তানদের সঙ্গেমা অভিন্না। সন্তানদের কণ্ঠই তাঁর কণ্ঠ, তাদের বলই তাঁর বল। সপ্তকোটি সন্তান কণ্ঠের কলকলনিনাদে তিনি বজ্ৰদীপ্ত, দ্বি-সপ্তকোটি হস্তের শাণিত কৃপাণে তিনি শক্তিময়ী। সন্তানদলের সম্মিলিত শক্তিতেই তিনি বহুবলধারিণী এবং তাদের শক্তিতেই তিনি বাধা-বিপদ অতিক্রম করেন—রিপুদলকে নিবারণ করেন। তিনি রিপুদলবারিণী’-রিপুদলনাশিনী নন। এই মা’ই হলেন সন্তানের সকল প্রেরণার উৎস—একমাত্র দেবতা। তিনি হলেন স্বয়ং বিদ্যা, ধর্ম (দেশপ্রেমই সন্তানের একমাত্র ধর্ম), হৃদয় ও মর্ম—সন্তানের দেহে তিনিই প্রাণস্বরূপিণী। সন্তানের বাহুতে তিনি শক্তিরূপে বিরাজ করেন, হৃদয়ে অবস্থান করেন ভক্তিরূপে এবং দেশভক্ত সন্তানদের হৃদয়-মন্দিরে কর্ম ও ভক্তির সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত হবে তাঁর এই সর্বাবয়ব দেবীমূর্তি। এই দেশমাতৃকাই হলেন দশপ্রহরণধারিণী দুর্গা, কমলদলবিহারিণী কমলা এবং বিদ্যাদায়িনী বাণী। তিনি নিজে দুর্গা, লক্ষ্মী ও সরস্বতী নন, কিন্তু এইসব দেবীর সকল গুণাবলির এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে তার মধ্যে। সন্তানদেরসকল কর্মপ্রয়াস ও কৃতিত্বের প্রেরণা হলেন দেশমাতৃকা। এই দেশমাতৃকার মূর্তি প্রতিষ্ঠিতহবে সারা দেশের মন্দিরে মন্দিরে। দেশপ্রেমের এ এক অনবদ্য মূর্ছনা।

বন্দে মাতরম্’-এর শেষ স্তবকে বলা হচ্ছেঃ-

“নমামি কমলাম্ অমলাম্ অতুলাম

সুজলাং সুফলাং মাতরম্

শ্যামলাং সরলাম্ সুস্মিতাং ভূষিতাম্

ধরণীং ভরণীম্ মাতরম্।”

অধ্যাপক জগদীশ ভট্টাচার্য সংগীতের শেষ স্তবকের এক অপূর্ব ব্যাখ্যা করেছেন।২০

তাঁর মতে, এখানে ‘কমলা’ অর্থে কমলদলবিহারিণী কমলা-কে বোঝানো হচ্ছে না। ‘কমলা’-র আক্ষরিক ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল ব্রহ্মত্ব ও শিবত্বদাত্রী মহাশক্তি—যিনি ব্রহ্মত্ব ও শিবত্ব দান করেন তিনিই কমলা। ব্রহ্ম হলেন তত্ত্বজ্ঞানী তপস্বী, আর শিব হলেন শুভংকরকল্যাণবিগ্রহ—অর্থাৎ দেশভক্ত সন্তান একাধারে জ্ঞানযোগী ও কর্মযোগী। কমলারূপিনী জন্মভূমি তার ভক্ত সন্তানকে জ্ঞান ও কর্মে উদ্বুদ্ধ করে তার বন্ধনমুক্তির পথ প্রস্তুত করেন। তারই তত্বার্থ হল ব্রহ্মত্ব ও শিবত্ব দান।২১ অধ্যাপক ভট্টাচার্যের মতে এখানে ‘শ্যামলা অর্থ শস্যশ্যামলা নয়। ‘শব্দকল্পদ্রুমে’ শ্যামলার অন্যতম অর্থ হল পার্বতী।

‘আমার দুর্গোৎসব’-এ কমলাকান্ত জন্মভূমিকে ‘নগাঙ্কশোভিনি নগেন্দ্ৰবালিকে’,‘হিমালয়নগবালিকে’, ‘শৈলপুত্রি বসুন্ধরে’ প্রভৃতি অভিধায় ভূষিত করেছেন। অধ্যাপক ভট্টাচার্য বলছেন যে, এখানে জন্মভূমি বঙ্গভূমির সীমানা অতিক্রম করে সমগ্র আর্যাবর্তে সম্প্রসারিত হয়েছে। অমরকোষ’ অনুসারে অধ্যাপক ভট্টাচার্য সরলা’র অর্থ করেছেন-দাক্ষিণ্যময়ী ঔদার্যময়ী—এই অর্থেই জন্মভূমি সরলা’। শব্দকল্পদ্রুম অনুসারে সুস্মিতার অর্থ দাঁড়ায়—‘অতীব সুন্দর মৃদু হাসি যার’। অধ্যাপক ভট্টাচার্যের মতে এটা কিন্তু সুহাসিনীং সুমধুরভাসিনীং’-এর পুনরুক্তি নয়। তার মতে, “প্রথম ক্ষেত্রে ছিল মায়েরইন্দ্রিয়বেদ্য বাহ্যরূপ, ‘সুস্মিতা’য় মায়ের আন্তর ধর্মের ধ্যানবেদ্য মুখশ্রী উদ্ভাসিত। সেই আন্তর ধর্মের কথা কমলাকান্ত বলেছে মাতৃস্তোত্রেঃ ‘শুভে শোভনে সর্বার্থসাধিকে। এই শুভংকরী শোভনা সর্বার্থসাধিকা মায়ের মনোময়ী প্রাণময়ী আত্মিক সত্তারই অমলিনমুখশ্রীর অনবদ্য বিশেষণ সুস্মিতা।”২২  ড.ভট্টাচার্যের মতে, এই মাতা তাঁর সন্তানদের জ্ঞান ও কর্মে উদ্বুদ্ধ করেন, তিনি দাক্ষিণ্যময়ী ও ঔদার্যময়ী, তাঁর মুখশ্রীতে তার হৃদয়ের অমলিন রূপ পরিস্ফুট—এই সকল গুণাবলিতে তিনি ভূষিতা। সংগীতের শেষে বঙ্কিমচন্দ্র জন্মভূমিকে বলছেন, ‘ধরণীং ভরণীম্’—অর্থাৎ জন্মভূমিই হলেন জগতের ভরণকারিণীজগদ্ধাত্রী। এখানে দেশমাতা ও জগন্মাতা মিলে মিশে একাকার হয়ে বঙ্কিমচন্দ্রের স্বদেশপ্রীতি জাগতিক প্রীতিতে এসে পূর্ণতা পেয়েছে, অর্থাৎ বঙ্কিমের কাছে দেশ, দেশবাসী ও জগজ্জননী এক ও অভিন্ন। কমলাকান্তের মা, বন্দে মাতরম্’-এর মা এবং ‘আনন্দ মঠ’- এ প্রতিষ্ঠিত মাতৃমূর্তি মূলতঃ এক। বলাবাহুল্য, ভারতমাতা’ গীতিনাট্য, ভুদেবের ‘পুষ্পাঞ্জলি’ এবং অক্ষয়চন্দ্র সরকারের ‘দশমহাবিদ্যার সঙ্গে এর সাদৃশ্য লক্ষণীয়। ডঃসুবোধচন্দ্র সেনগুপ্তের মতে, “দেশলক্ষ্মীর এইরূপ পরিপূর্ণ সমগ্র মূর্তি কোনো দেশের সাহিত্যে কেহ আঁকিয়াছেন কিনা সন্দেহ।”২৩ অধ্যাপক জগদীশ ভট্টাচার্য লিখছেন-“পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এমন উদার, এমন গভীর, এমন কোমল বিশ্বপ্রীতিপূর্ণ স্বদেশসংগীত আছে বলে আমাদের জানা নেই।২৪

ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার-এর মতে, এই সংগীতে দেশমাতৃকাকে শক্তি, ভক্তি, জ্ঞান ও ধর্মের উৎস বলে বলা হয়েছে—দেশের বাহ্যিক রূপ ও আধ্যাত্মিকতার এমন সুষ্ঠু সমন্বয় বিশ্বের ইতিহাসে বিরল।২৫

এখানে একটি কথা বলা প্রয়োজন যে, শতাধিক বৎসর পূর্বে রচিত ‘বন্দে মাতরম্’ আজও বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় সংগীত বলে স্বীকৃত। বি বি সি, ওয়ার্ল্ড সার্ভিস (B.B.C. World Service)-এর ৭০ বৎসর পূর্তি উপলক্ষে (২০০২ খ্রিঃ) ১৫৩টি দেশের দেড় লক্ষের বেশি ভোটারের মতামতের ভিত্তিতে ১৮৪১ সালে আইরিশ দেশপ্রেমিক টমাস ডেভিস রচিত আয়ারল্যান্ডের জাতীয় সংগীত ‘এনেশন ওয়াল এগেইন’ প্রথম স্থান অধিকার করে। দ্বিতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় জাতীয় সংগীতের শিরোপা পায় ‘বন্দে মাতরম্’।২৬

ভারতবর্ষের বহুকাঙ্খিত স্বাধীনতা প্রাপ্তির ৭৫ বছর উদযাপনকালে সমগ্র ভারতবাসীর মনে ‘বন্দেমাতরম্‌’ মহামন্ত্রের স্বরূপ ও অর্থ নতুন করে দেশপ্রেমের জোয়ার এনে দিক। বিশেষ করে বর্তমান কঠিন পরিস্থিতিতে নব প্রজন্ম দেশের জাতীয় স্তোত্রের স্বরূপ ও অর্থ অনুধাবন করে দেশকল্যানে ব্রতী হোক ঈশ্বরের কাছে এটুকুই প্রার্থনা।

 

তথ্যসুত্রঃ

১। RISHI BUNKIM CHANDRA,Sri Aurobindo Ghosh,February 1923.prabartak Publishing House, Chandernagore.

২।মুখ্যোপাধ্যায় জীবন, “আনন্দমঠ ও ভারতীয় জাতীয়তাবাদ।” দ্বিতীয় সংস্করণ ১৫ইনভেম্বর,২০১০,পৃষ্ঠা-৮৭।

৩। শনিবারের চিঠি, বঙ্কিমসংখ্যা, সম্পাদনা ও সজনীকান্ত দাস, নাথ পাবলিশিং ১৯৯৯,
পৃঃ ৫১-৫২।
৪। সাহিত্য, ১৩১৩, শ্রাবণ, পৃঃ ২৫৩-৫৫। পরবর্তীকালে উক্ত প্রবন্ধের মাত্র তিন-চারটি শব্দ পরিবর্তন করে শ্রীহেমেন্দ্র প্রসাদ ঘোষ সমগ্র প্রবন্ধটি তার বঙ্কিমচন্দ্র গ্রন্থে (শক
১৮৮৪, পৃঃ ২২২-২৫) সন্নিহিত করেছেন।
৫। Speeches, Sri Aurobindo, Pondicherry, 1974, P. 43. also vide, Sri
Aurobindo Birth Centenary Library, Vol. I. 1972, P. 666.
৬। India Old and New, Valentine Chirol, London, 1921, P. 114-15.
৭। A History of the Indian Nationalist Movement, Sir Verney Lovett,  London, 1968, P. 63.
৮। গ্রিয়ারসন, কটন, অ্যাণ্ডারসন ও রমেশচন্দ্র দত্তের মতামত বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ প্রকাশিত  ‘আনন্দমঠ’-এর সম্পাদকীয় ভূমিকায় উদ্ধৃত রমেশচন্দ্র দত্তের রচনা থেকে সংগৃহীত।
৯। The Bengalee, 30.11.1906 এবং শনিবারের চিঠি, ১৩৫৬, মাঘ, পৃঃ ৩৬১।

১০। বিনয় সরকারের বৈঠকে, দ্বিতীয় খণ্ড, হরিদাস মুখােপাধ্যায় ও অন্যান্য, ১৯৪৫,
পৃঃ ৬৪-৬৫।
১১। বঙ্কিম রত্ন, নরেন্দ্রনাথ শেঠ, ১৩৪৫, পৃঃ ৪০।
১২। স্বদেশী আন্দোলন ও বাংলায় নবযুগ, উমা মুখােপাধ্যায় ও হরিদাস মুখােপাধ্যায়, ১৯৬১, পৃঃ ২৪৩।
১৩। Swadeshi and Swaraj, Bepin Chandra, Pal. Cal. 1954 P. 293, শ্রীপালের
এ ধরনের আরও মতামতের জন্য উল্লিখিত গ্রন্থের ১০৪, ২৮৭-৯৫ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।
১৪। ধর্ম’ পত্রিকা বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য, উৎসাহী ব্যক্তি শনিবারের চিঠি’, ১৩৫৭, কার্ত্তিক, পৃঃ ১-১৪  সমগ্র রচনাটি দেখতে পারেন।
১৫। বর্তমান প্রবন্ধকারের কাছে শ্রীজীবনতারা হালদারের স্বাক্ষরিত বিবৃতি (১২ই শ্রাবণ, ১৩৮৮)। অপর এক বিবৃতিতে তিনি, বন্দে মাতরমকে মন্ত্র এবং দেশপ্রেমের ‘বীজমন্ত্র’ বলেন (২রা শ্রাবণ ১৩৮৮)।
১৬। বঙ্কিম-জীবনী, শচীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, তৃতীয় সংস্করণ, পৃঃ ২৯৪-৯৫।।
১৭।ঐ, পৃঃ ২৯২-৯৩।
১৮। স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতি, নীরদ কুমার গুপ্ত, শিলচর, ১৯৭৪, পৃঃ ১৩। এ সম্পর্কে। বিশদ আলোচনার জন্য ‘বন্দে মাতরম্’, নগেন্দ্রকুমার গুহরায়, শনিবারের চিঠি, ১৩৫৬, পৃঃ ৩৫১-৫৪ এবং ‘বন্দে মাতরম্‌—শতবর্ষের স্মৃতি’, জীবন মুখােপাধ্যায়, সমাজশিক্ষা, ১৯৭৬, অক্টোবর, পৃঃ ২০৪-৭ দ্রষ্টব্য।
১৯। বাংলা দেশের ইতিহাস, (চতুর্থ খণ্ড), রমেশচন্দ্র মজুমদার, ১৯৭৫, পৃঃ ২০০।
২০। বন্দে মাতরম্, জগদীশ ভট্টাচার্য, পৃঃ ১৩৮-৪০। এছাড়াও Interpretation of Bondey
Matorom : The Premier National Song of India, Subroto Kumar Dinda, 1970 বইটি দেখা যেতে পারে। ১৯৫ পৃষ্ঠাব্যাপী বইটিতে বেশ কিছু নতুন কথা আছে।
২১। ঐ,পৃঃ ১৩৮-৩৯।
২২। ঐ, পৃঃ ১৪০।
২৩। বঙ্কিমচন্দ্র, সুবােধচন্দ্র সেনগুপ্ত, ১৯৭২, পৃঃ ১৬২।
২৪। বন্দে মাতরম, জগদীশ ভট্টাচার্য, পৃঃ ১৪০।
২৫।”Such a curious blending of the physical and spiritual conception of
the motherland is perhaps unique in the literature of the world.”-History of Freedom Movement in India, Vol. II, R. C. Majumdar,
1975, P. 150.
২৬। Indian Express, 22.12.2002 এবং বর্তমান, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০০২।

(লেখক হলেন গবেষক, মুর্শিদাবাদ জেলা ইতিহাস ও সংস্কৃতি কেন্দ্র এবং এমএ (বাংলা বিভাগ) রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। মতামত এবং বিশ্লেষণ লেখকদের নিজস্ব)।