Dr. Syama Prasad Mookerjee Research Foundation

“আত্মনির্ভর ভারত” – প্রধানমন্ত্রী শ্রীনরেন্দ্র মোদীর দেওয়া ভারতবর্ষের জনগণকে আত্মশক্তির এক মন্ত্র।

ভারতবর্ষ  নিজেই সমগ্র পৃথিবীর একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ। প্রাচীনকাল থেকেই এইদেশ সমস্ত দিক থেকে নিজেকে যোগ্য রূপে প্রমাণ করেছে বিশ্বের সামনে। জ্ঞান- বিজ্ঞান, ব্যবসা, প্রাকৃতিক  সম্পদ ও সংস্কৃতিতে পরিপুষ্ট ভারতবর্ষ তাই বিশ্বের ঈর্ষার কারণ সেই প্রথম থেকেই। বিশ্বের কাছে ‘সোনার পাখি’ – নামে পরিচিত এই দেশ  আভ্যন্তরীণ  ক্ষমতায় বলীয়ান হয়ে এসেছে যুগ যুগ ধরে। সেই ক্ষমতার লোভে, লোভী সাম্রাজ্যবাদী বিদেশী শক্তি বার বার আক্রমণ করে লুঠ করেছে এদেশের সম্পদ, বার বার এদেশের মানুষ নিজেকে সমৃদ্ধশালী করে তুলেছে নিজ মনোবলের ওপর নির্ভর করে। বিদেশীরা কখনো এদেশে এসে এদেশকেই আপন করে নিয়েছে আবার কখনও এদেশের সম্পদ লুঠ করে নিজের দেশে ঘটিয়েছে শিল্প বিপ্লব। ধ্বংস করেছে ভারতের শিল্পকে। সাহিত্য  সম্রাট ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষায়- যে দেশ ছিল সর্বালঙ্কারপরিভূষিতা দেবী জগদ্ধাত্রী, বিদেশীদের লুন্ঠনে তা হয়ে ওঠেন অন্ধকারসমাচ্ছন্না কালিমাময়ী। হৃতসর্বস্বা, নগ্নিকা, কঙ্কালমালিনী।

কিন্তু ওই যে ‘ভারতবর্ষ সূর্যের এক নাম’-আর সূর্যের দিপ্তী মেঘের আড়ালে লুকিয়ে রাখা যেতে পারে ক্ষণিকের জন্য, তারপর সেই সূর্য ফের উজ্জ্বল হয়ে ওঠে স্বমহিমায়। ভারতবর্ষের ক্ষেত্রেও তাই, বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এ দেশকে যতই দুর্বল করার চেষ্টা করুক না কেন, এদেশের  মানুষ তার সংস্কৃতি, তার ঐতিহ্য,জ্ঞান-বিজ্ঞান,  প্রাকৃতিক সম্পদ ও আত্মশক্তির প্রয়োগে ফের ভারতকে জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসনে বসাবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে সফলতার সাথে। সাহিত্য সম্রাট এই ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন দেশমাতৃকা সম্পর্কে- ” এই মা যা হইবেন। দশভুজ দশদিকে প্রসারিত- তাহাতে নানা আয়ুধরূপে নানা শক্তি শোভিত,পদতলে শত্রু বিমর্দিত,পদাশ্রিত বীরকেশরী শত্রুনিপীড়নে নিযুক্ত।…দক্ষিণে লক্ষ্মী ভাগ্যরূপিণী- বামে বণী বিদ্যা-বিজ্ঞানদায়িনী- সঙ্গে বলরূপী কার্তিকেয়, কার্যসিদ্ধিরূপী গণেশ। “

ঋষি বঙ্কিম  বিদেশী শক্তির বন্ধনপাশ থেকে মুক্তির জন্য দেশের মানুষকে আত্মশক্তিতে  বলীয়ান হওয়ার যে মন্ত্র দেন সেই ‘বন্দেমাতরম্’ মন্ত্র হয়ে ওঠে স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজমন্ত্র। সমস্ত লুঠ হয়ে যাওয়ার পরও যে ফিরে পাওয়ার, ছিনিয়ে নেওয়ার অদম্য আত্মশক্তির প্রয়োজন ছিল তা বঙ্কিম তাঁর  ‘বন্দেমাতরম্’ মন্ত্রে যেন পুরে দিয়েছিলেন। পরাধীন ভারতের মানুষ পুনরায় পেয়েছিল আত্মনির্ভরতার স্বাদ। তাঁদের এই আত্ম নির্ভরতাই এনে দিয়েছিল ভারতবর্ষের বহু কাঙ্খিত  স্বাধীনতা।

 বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখছেন- “•••ভারতবাসী যদি ভারতবর্ষের সকল প্রকার হিতকর দান,কোনাে একটি প্রবল শক্তিশালী যন্ত্রের হাত দিয়েই চিরদিন গ্রহণ করতে অভ্যস্ত হয়, তা হলে তার সুবিধা সুযোগ যতই থাক, তার চেয়ে দুর্গতি আমাদের আর হতেই পারে না। সরকারবাহাদুর নামক একটা অমানবিক প্রভাব ছাড়া আমাদের অভাব-নিবারণের আর কোন উপায় আমাদের হাতে নেই, এই রকম ধারণা মনে বদ্ধমূল হতে দেওয়াতেই আমরা নিজের দেশকে নিজে যথার্থভাবে হারাই। আমাদের নিজের দেশ যে আমাদের নিজের হয় নি তার প্রধান কারণ এ নয় যে, এ দেশ বিদেশীর শাসনাধীনে। আসল কথাটা এই যে, যে দেশে দৈবক্রমে জন্মেছি মাত্র সেই দেশকে সেবার দ্বারা, ত্যাগের দ্বারা, তপস্যা-দ্বারা, জানার দ্বারা, বােঝার দ্বারা সম্পূর্ণ আত্মীয় করে তুলি নি একে অধিকার করতে পারি নি। নিজের বুদ্ধি দিয়ে, প্রাণ দিয়ে, প্রেম দিয়ে যাকে গড়ে তুলি তাকেই আমরা অধিকার করি।আমাদের দেশকে সম্পূর্ণভাবে কেউই কেড়ে নিতে পারে না, এবং সেই দেশকে বাইরে থেকে দয়া করে কেউ আমাদের হাতে তুলে দেবে এমন শক্তি কারও নেই। দেশের পরে নিজের স্বাভাবিক অধিকারকে যে পরিমাণে আমরা ত্যাগ করেছি সেই পরিমাণেই অন্যেরা  তাকে অধিকার করেছে।”- অর্থাৎ আমরা যদি আত্মনির্ভরশীল না হয়, যদি সর্বদা অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল থাকি তবে চিরটাকাল আমরা পরাধীন থাকব। বিশ্বকবির এই মর্মকথা ভারতীয়র মনের কথা, তাই আজ আমরা স্বাধীন ভারতের স্বাধীন নাগরিক।

কিন্তু শুধু স্বাধীনতা অর্জনই কি ভারতবর্ষের তথা ভারতবাসীর লক্ষ্য! তা তো নয়,  ভারতবর্ষকে জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠত্বের আসনে প্রতিষ্ঠা করা প্রত্যেক।ভারতীয়ের স্বপ্ন আর এই স্বপ্ন পূরণের মূল বাণীই হলো আত্মনির্ভরতা। এমন এক আত্মনির্ভর ভারতের নির্মাণ যা সমগ্র বিশ্বের কাছে শিক্ষণীয় নিদর্শন  হয়ে থাকবে আজন্মকাল। সেই লক্ষ্যেই ভারতবর্ষের  বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মাননীয় শ্রী নরেন্দ্র দামোদর মোদীজি দেশের জনগণকে আহ্বান জানান আত্মনির্ভর হতে, শপথ নেন একসাথে ভারতবর্ষকে আত্মনির্ভর করে তোলার।

২০১৯ খ্রীস্টাব্দের শেষ দিক থেকে কোভিড-১৯ নামক চীনা মারণ ভাইরাস মহামারীর ধাক্কায় ভারত তথা সমগ্র পৃথিবীর  সামাজিক  রাজনৈতিক  ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে চরম হাহাকার সৃষ্টি হয়। ভারতবর্ষে এই হাহাকার একই ভাবে চরম আকার নেবে সেটাই  স্বাভাবিক। লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু, কোটি কোটি মানুষ আক্রান্ত। এমতাবস্থায় বিপদ চিকিৎসা শাস্ত্রের মধ্যেই কেবল সীমাবদ্ধ  থাকেনি, অধিক জনসংখ্যার  দেশ হওয়ায় অর্থনিতীর ওপরেও এর প্রভাব যথেষ্ট।

কেবল ভারতবর্ষ নয় পৃথিবীর বহু অর্থনৈতিকভাবে ও চিকিৎসায় উন্নত দেশ যেমন- আমেরিকা, ইতালি বিপদের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেনি।

সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সকলেই গৃহবন্দী। এর ফল পড়েছে সরাসরি  দেশের অর্থনিতীতে। অর্থনৈতিকভাবে প্রথম সারিতে থাকা পাশ্চাত্য দুনিয়ার অর্থনিতী ধ্বংসের  মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে, ধস নেমেছে উৎপাদনে। ভারতবর্ষে উৎপাদন ব্যবস্থার সমস্যার সাথে রয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকের সমস্যা।উৎপাদন ব্যবস্থার বিপর্যয়, পরিযায়ী শ্রমিক সমস্যা অর্থনীতির বেহাল বিপর্যয় অবস্থা কিভাবে কাটিয়ে উঠবে তা বুঝে উঠতে পারছেনা কোন অর্থনীতিবীদ। পৃথিবীর তাবড়-তাবড় ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক দেশ আজ এর সদুত্তর খুঁজে পাচ্ছে না। এর উত্তর পেতে ভারতবর্ষকে নজর ফেরাতে হবে তার অতীতে,বিকেন্দ্রীকরণ স্বদেশী অর্থনিতীর দিকে। অতীতের ভারতবর্ষ স্বদেশী অর্থনীতির ওপর ভিত্তি করে অর্থনীতির ময়দানে যে সফলতা এনেছিল, সমসাময়িক বিশ্বের কোন দেশ তা করতে সক্ষম হয়নি। খ্রীস্টপূর্ব  বিশ্বের অর্থনিতীর চল্লিশ শতাংশ ছিল ভারতের দখলে। গ্রীক, শক, হুন প্রভৃতি বিদেশী আক্রমণকে প্রতিহত করেও এ অবস্থা চলেছিল  প্রায় ১০০০ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত।  এরপর ভারত আক্রান্ত ও লুণ্ঠিত  হতে থাকে বিদেশী মুসলমানদের হাতে! এর প্রভাব পরে ভারতীয় অর্থনীতিতে। তবুও একসময় বিদেশী মুসলমান এদেশেই বসবাস শুরু করে,শোষণের করাল গ্রাস তখন ধীরে ধীরে গিলতে শুরু  করেছিল সমগ্র দেশের অর্থনিতীকে, ভারতের দখলে তখন কেবল ২০ শতাংশ।

এরপর এলো বিপর্যয়! ভারতীয় অর্থনীতির সবচেয়ে কালো দিন। ব্রিটিশ অধীনস্থ ভারতবর্ষে স্বদেশী অর্থনীতি ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে লাগল আর তার জায়গায় বাজার দখল করতে লাগল ইউরোপীয় বিভিন্ন  অর্থনীতি। ১৯৪৭ সালে ইংরেজকে বিতাড়িত করে স্বাধীনতা লাভের সময় ভারতবর্ষের অবদান বিশ্ব অর্থনীতিতে মাত্র ২ শতাংশ। আজ স্বাধীনতার ৭৫ বছরে দাঁড়িয়ে ভারতবর্ষের অবদান বিশ্ব অর্থনীতিতে মাত্র ৫ শতাংশ।

২০০০-এর দশকের শেষভাগে ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়ায় ৭.৫% ২০১৫-১৬ সালে সার্বিক জিডিপির হার ৭.২ ℅হলেও সার্বিক পরিসেবার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বৃদ্ধির হার পরিলক্ষিত হয় যা ছিল ১০.২℅। এমতাবস্থায় ২০১৯ এর শেষের দিকে চীনে উদ্ভুত মহামারী Covid-19 বিশ্বে সন্ত্রাসের থাবা বসাতে শুরু করে যা ২০২০ এপ্রিল মাসের শেষ দিকে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রকট রূপ নিতে শুরু করে। ভারতবর্ষ জুড়ে ঘোষিত হয় লকডাউন।

করোনা আক্রান্ত পৃথিবীতে সামাজিক দুরত্ব রাখার তাগিদে যখন পরিবহণ ব্যবস্থাই প্রায় বিপর্যস্ত, গোটা পৃথিবী জুড়ে  তখন পরিবহণনির্ভর কেন্দ্রীভূত সমাজতান্ত্রিক ও ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি হয়ে পড়েছে পঙ্কবদ্ধ হস্তীর মতো অচল। স্বদেশি অর্থনীতির বিকেন্দ্রীকৃত উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থায় উৎপাদন ও বিপণন পরিবহণের ওপর নির্ভরশীল নয় এবং কর্মীরাও একত্রিত হয় স্থানীয় স্তরে কাজ পায়। এটা গোটা বিশ্ব তথা ভারতবর্ষ মর্মে মর্মে উপলব্ধি করে। ফলে ২০২০ সালের ১২ ই মে রাত্রি ৮ টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী  শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণেও সেই উপলব্ধির সুর ধ্বনিত হয়। প্রধানমন্ত্রী বললেন বিশ্বগুরু হতে হলে ভারতকে আত্মনির্ভর হতে হবে, কিন্তু আত্মকেন্দ্রিক নয়। এখন সমস্ত বিশ্বজুড়ে অর্থকেন্দ্রিক বিশ্বায়ন বনাম মানব কেন্দ্রিক বিশ্বায়নের চর্চা হচ্ছে। ভারতই এই মানব কেন্দ্রিক বিশ্বায়নের প্রবক্তা,যার আত্মা ‘বসুধৈব কুটুম্বকম্’ ভাবনার মধ্যে নিহিত।প্রধানমন্ত্রী আরও বললেন, ‘লোকালের জন্য ভোকাল হতে হবে।’ অর্থাৎ স্থানীয়ভাবে উৎপন্ন উন্নত  গুণমান সম্পন্ন দ্রব্য গর্বের সঙ্গে শুধু নিজেরাই নয়, অন্যকেও ব্যবহার করার জন্য উৎসাহিত করতে হবে।

আত্মনির্ভর ভারত গড়ার লক্ষ্যে আটটি ক্ষেত্রে গঠনগত সংস্কারঃ

প্রাক কোভিড এবং কোভিড পরবর্তী ভারতের বিষয়ে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একবিংশ শতাব্দীর ভারতের স্বপ্ন পূরণ করতে হলে আমাদের স্বনির্ভর হয়ে উঠতে হবে। এই সঙ্কটের ফলে যে সুযোগ এসেছে, সেই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) কিট এবং এন ৯৫ মাস্ক দৈনিক  ২ লক্ষটি করে তৈরি হচ্ছে, এক সময়ে যা তৈরির পরিমাণ ছিল অত্যন্ত নগণ্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বায়নের এই পৃথিবীতে আত্মনির্ভরতার সংজ্ঞা বদলে গেছে। তিনি এ বিষয়ে ব্যাখ্যা করে বলেন, দেশ যখন স্বনির্ভরতার কথা বলে, তা আত্ম-কেন্দ্রিকতার থেকে আলাদা। সারা বিশ্বকে একটি পরিবার হিসেবে ভাবাই ভারতীয় সংস্কৃতি, ভারতের প্রগতির অংশীদার হবে গোটা বিশ্ব। তিনি বলেন, সারা বিশ্ব মনে করে সমগ্র মানবজাতির উন্নয়নে ভারতের প্রচুর অবদান থাকবে।

কচ্ছের ভূমিকম্পের পর সেখানের বিপর্যয়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দৃঢ় সংকল্পের কারণে ওই এলাকার পুনর্গঠন সম্ভব হয়েছিল। সেই একই ধরণের সঙ্কল্পের মাধ্যমেই দেশকে আত্মনির্ভর করে তুলতে হবে।

শ্রী মোদী বলেন, আত্মনির্ভর ভারত দাঁড়িয়ে থাকবে পাঁচটি স্তম্ভের উপর। এগুলি হল – ১, অর্থনীতি, যা  ক্রমবর্ধমান পরিবর্তনই আনবে না, প্রয়োজনীয় উচ্চতায়ও পৌঁছাবে। ২। পরিকাঠামো যা হবে ভারতের পরিচয়। ৩। ব্যবস্থা- একবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবস্থাপনা। ৪। প্রাণবন্ত জনসাধারণ – যা হবে আত্মনির্ভর ভারতের শক্তির উৎস।

৫। চাহিদা- আমাদের যে চাহিদা রয়েছে তা সরবরাহ শৃঙ্খলের পূর্ণ ক্ষমতার মাধ্যমে পূরণ করা হবে। তিনি সরবরাহ শৃঙ্খলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে আরো শক্তিশালী করে তোলার উপর জোর দেন যাতে সব চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়।

সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় অর্থ ও কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রী, শ্রীমতী নির্মলা সীতারামন, ১৬ই মে ২০২০ সালে তাঁর তৃতীয় দফা সংবাদ সম্মেলনে পরিকাঠামোগত সংস্কার সংক্রান্ত  এক গুচ্ছ প্রস্তাব পেশ করেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রের নীতিগুলির সরলীকরণ প্রয়োজন। এর ফলে লোকে সহজেই বুঝবে সেখান থেকে কি কি পাওয়া যাবে। যার মাধ্যমে সংস্কার আনা সম্ভব হবে। এই ক্ষেত্রগুলির জটিলতা দূর করতে পারলে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলিতে বিকাশ ত্বরান্বিত হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী সংস্কারনীতি গ্রহণ করতে সবসময়ই উদ্যোগী। তিনি জনসাধারণের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউণ্টে  টাকা পাঠানোরর ব্যবস্থা, সারা দেশে জিএসটি চালু করা, দেউলিয়া ও ঋণখেলাপী নীতির মত বিভিন্ন নীতি বাস্তবায়িত করেছেন।

তাঁর সংবাদ সম্মেলনে শ্রীমতী সীতারামন বিনিয়োগে গতি আনতে নীতিমালার সংস্কারের উপর জোর দেন। তিনি বলেন প্রত্যেক মন্ত্রকের প্রকল্প রূপায়ন সেল গঠন করা হবে। যারা বিনিয়োগের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প তৈরি করবেন এবং কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের বিষয়ে সমন্বয় সাধন করবেন। বিভিন্ন প্রকল্পে দ্রুত অনুমোদন দিতে সচিবদের বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত গোষ্ঠী গড়ে তোলা হবে।

আত্ম নির্ভর ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে অর্থমন্ত্রী নিম্নলিখিত সংস্কারগুলি উল্লেখ করেনঃ-

ক) ক্ষমতাপ্রাপ্ত সচিবদের গোষ্ঠীর মাধ্যমে বনিয়োগ সংক্রান্ত অনুমোদন দ্রুত দেওয়া হবে।

খ) প্রত্যেক মন্ত্রক, প্রকল্প রূপায়ন সেল গঠন করবে। যারা বিনিয়োগের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প তৈরি করবে  এবং কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের বিষয়ে সমন্বয় সাধন করবে।

গ) নতুন বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করার জন্য রাজ্যগুলিকে বিশেষভাবে উদ্যোগী হতে হবে।

ঘ) সৌরশক্তির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, উন্নতমানের ব্যাটারি তৈরির মতো নতুন নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য বিশেষ সুবিধের ব্যবস্থা করতে হবে।

শ্রীমতী সীতারামণ বলেন, সাধারণ পরিকাঠামো ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রাজ্যগুলিকে শিল্প ক্লাস্টার গড়ে তুলতে হবে। যেখানে শিল্পতথ্য ব্যবস্থাপনা জিআইএস ম্যাপিংএর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জন্যে নানা তথ্যের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া শিল্পের জন্য জমিব্যাঙ্কের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য বিনিয়োগকারীদের দেওয়া হবে। শিল্পতথ্য ব্যবস্থাপনার আওতায় ৩৩৭৬টি শিল্পতালুক এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল চিহ্নিত করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী, আজ কয়লা, খনি, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন, অসামরিক বিমান চলাচল, বিদ্যুৎ ক্ষেত্র, সামাজিক পরিকাঠামো, মহাকাশ ও আনবিক শক্তির মতন ৮টি ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত সংস্কারের কথা ঘোষণা করেন।

) কয়লা ক্ষেত্রঃ

১) কয়লা ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক খনন প্রক্রিয়ার সূচনা।সরকার, কয়লা ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা, স্বচ্ছতা এবং বেসরকারী অংশীদারিত্বকে আনতে চায়।

অ) টন প্রতি নির্দিষ্ট অর্থের পরিবর্তে রাজস্ব আদায়ের নতুন ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে। যে কেউ খোলা বাজারে কয়লার ব্লকের বন্টনের প্রক্রিয়ায় শরিক হতে পারবেন।

আ) এই ক্ষেত্রে যুক্ত হওয়ার  নিয়মকানুন শিথিল করা হয়েছে। প্রায় ৫০টি ব্লকের নিলাম দ্রুত ডাকা হবে। এর জন্য কোনো শর্ত রাখা হবে না। শুধুমাত্র ব্লকের দামের একটি সিলিং নির্ধারণ করা থাকবে।

ই) আগে সম্পূর্ণ কয়লার ব্লকের নিলাম ডাকা হত। বর্তমানে আংশিক খনন হয়েছে, এরকম ব্লকের জন্য খনন ও উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হবে। এর ফলে বেসরকারী ক্ষেত্রকে সহজেই অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।

ঈ) রাজস্ব ভাগাভাগির ছাড়ের সুযোগ চালু করা হবে।

) কয়লা ক্ষেত্রে নানা সুযোগ বৃদ্ধি

অ) কয়লা খনি অঞ্চলে তরল কয়লা এবং গ্যাস উত্তোলনের কাজে বিশেষ উৎসাহ দেওয়া হবে। যার ফলে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব কম পড়বে এবং গ্যাস ভিত্তিক অর্থনীতির দিকে ভারত একধাপ এগোবে।

আ) কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড, ২০২৩ – ২৪ সালের মধ্যে ১০০ কোটি টন কয়লা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে। এই উত্তোলনের সুবিধের জন্য ৫০,০০০ কোটি টাকার পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটানো হবে। এর মধ্যে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে কনভেয়ার বেল্টের সাহায্যে কয়লা খনি থেকে রেলওয়ে সাইডিংএ কয়লা পাঠানো হবে। এর জন্য ১৮,০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ করা হবে। এই উদ্যোগের ফলে পরিবেশে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে।

) কয়লা শিল্পের উদারীকরণ

অ) কোল ইন্ডিয়া লিমিটেডের কয়লা খনি থেকে খনির মধ্যে থাকা মিথেন গ্যাস উত্তোলনের জন্য নিলাম ডাকা হবে।

আ) সহজে ব্যবসা করার জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যেখানে খনি থেকে উত্তোলন প্রক্রিয়ার সরলীকরণ করা হবে। এর ফলে বার্ষিক উৎপাদন ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

ই) কোল ইন্ডিয়া লিমিটেডের গ্রাহকদের বাণিজ্যিক শর্তে কিছু ছাড় দেওয়া হবে। যেখানে ৫০০০ কোটি টাকার ছাড়ের সুযোগ মিলবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির গ্রাহকরা ছাড়া অন্য গ্রাহকদের ক্ষেত্রে নিলামের সময় যে মূল্য ধার্য করা হয়েছিল, তা হ্রাস করা হবে। তাদের ঋণ নেওয়ার সুযোগ বৃদ্ধি করা হবে এবং খনি থেকে উত্তোলনের সময়সীমা বাড়ানো হবে।

) খনি শিল্পঃ– 

) খনি শিল্পে বেসরকারী বিনিয়োগে উৎসাহ দান।

পরিকাঠামোগত সংস্কার এনে এই শিল্পের বিকাশ, কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি এবং উত্তোলনের সময় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হবে।

অ) নিরবিচ্ছিন্নভাবে খনি থেকে উত্তোলন এবং উৎপাদনের প্রক্রিয়া চালু করা হবে।

আ) মুক্ত ও স্বচ্ছভাবে ৫০০টি খনি ব্লকের নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।

ই) অ্যালুমিনিয়াম শিল্পের প্রতিযোগিতা বাড়াতে এবং এই শিল্পের বিদ্যুৎএর খরচ কমাতে বক্সাইট ও কয়লা খনির যুগ্মনিলাম ডাকা হবে।

) খনি শিল্পে নীতিগত সংস্কার গ্রহণ– 

খোলা মুখ এবং বদ্ধমুখ খনির মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে খনন কাজের লিজ দিতে বিশেষ হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় অনুমতি দেওয়া হবে। এছাড়া খনি শিল্পের উত্তোলন এবং উৎপাদনে গতি আনতে অব্যবহৃত খনিজ সম্পদ বিক্রিরও অনুমতি দেওয়া হবে। খনি মন্ত্রক, বিভিন্ন খনিজ পদার্থের একটি সূচক তৈরি করবে। যার মাধ্যমে খনিগুলির লিজ দেওয়ার সময় স্ট্যাম্প ডিউটি বাবদ টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়ার সরলীকরণ ও স্বচ্ছতা আনা হবে।

) প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রঃ

) প্রতিরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনে আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধি

অ) প্রতিরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনে আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধির জন্য মেক-ইন-ইন্ডিয়া কর্মসূচীতে উৎসাহ দেওয়া হবে। বেশ কিছু অস্ত্রশস্ত্র বিদেশ থেকে আমদানী করার ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়সীমার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। বিদেশ থেকে আমদানী করা যন্ত্রপাতি দেশে উৎপাদনে উদ্যোগ নেওয়া হবে। দেশে উৎপাদিত পণ্য কেনার জন্য পৃথক বাজেটের ব্যবস্থা করা হবে। এর ফলে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আমদানী খরচ হ্রাস পাবে।

আ) অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডকে নিগমে পরিণত করা হবে। যার ফলে এই বোর্ডের স্বায়ত্ত্বশাসন, দায়বদ্ধতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।

) প্রতিরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনে নীতির সংস্কার

অ) প্রতিরক্ষা উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের নূন্যতম পরিমাণ ৪৯ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৭৪ শতাংশ করা হবে।

আ) প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সংগ্রহ করার পদ্ধতির সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হবে। একটি প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইউনিট গড়ে তোলা হবে। যারা বিভিন্ন চুক্তির ব্যবস্থাপনা, অস্ত্রশস্ত্র কেনার ক্ষেত্রে জেনারেল স্টাফ কোয়ালিটেটিভ রিকোয়ারমেন্টের দিকগুলি বিবেচনা করবে এবং প্রতিরক্ষা সামগ্রীর পরীক্ষা – নিরীক্ষার দিকটি তদারকি করবে।

) অসামরিক বিমান চলাচল ক্ষেত্রঃ– 

) দক্ষ আকাশপথ ব্যবস্থাপনা

ভারতীয় আকাশপথের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামরিক বিমান চলাচলের যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেগুলিকে শিথিল করা হবে। এর ফলে অসামরিক বিমান চলাচল ক্ষেত্রে প্রতিবছর ১০০০ কোটি টাকা লাভ হবে। আকাশপথের সর্বোচ্চ ব্যবহার ও জ্বালানী এবং সময়ের সাশ্রয় ছাড়াও পরিবেশে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

২) সরকারী, বেসরকারী অংশীদারিত্বে আরো বিশ্বমানের বিমানবন্দর গড়ে তোলা।

সরকারী, বেসরকারী অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দ্বিতীয় দফায় আরো ৬টি বিমান বন্দরের নিলাম করা হবে। প্রথম এবং দ্বিতীয় দফায় ১২টি বিমান বন্দরে বেসরকারী সংস্থাগুলো অতিরিক্ত ১৩,০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তৃতীয় দফার নিলামে আরো ৬টি বিমান বন্দরকে সামিল করা হবে।

৩।  ভারতকে বিমান মেরামতি ও রক্ষণাবেক্ষণর আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ।

এমআরও ব্যবস্থার কর প্রক্রিয়ার সরলীকরণ করা হবে। বিমানের যন্ত্রাংশের মেরামত এবং বিমানের রক্ষণাবেক্ষনের শিল্পে লগ্নী আগামী ৩ বছরে ৮০০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২০০০ কোটি টাকা হবে। আশা করা হচ্ছে, আগামীদিনে ভারতে বিমানের ইঞ্জিন তৈরির সংস্থাগুলি মেরামতির বড়ো ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলবে। সামরিক এবং অসামরিক বিমান চলাচল ক্ষেত্রের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটানো হবে, রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কমে যাবে।

বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে

. শুল্ক নীতি সংস্কার

নিম্নলিখিত সংস্কারগুলি প্রদানে একটি শুল্ক নীতি প্রকাশ করা হবে

অ) গ্রাহক অধিকার

  • ডিসকম/বিতরণ কোম্পানীগুলির অদক্ষতার বোঝা গ্রাহকদের বইতে হবে না।
  • বিতরণ কোম্পানীগুলির জন্য পরিষেবা মান এবং সেই সম্পর্কিত জরিমানা।
  • পর্যাপ্ত শক্তি সুনিশ্চিত করতে হবে বিতরণ কোম্পানীগুলিকে : লোডশেডিং-এর জন্য দন্ডিত করা হবে।

) শিল্পের প্রসার

  • ভর্তুকিতে উল্লেখযোগ্য ছাড়।
  • উন্মুক্ত প্রবেশাধিকারের সময়সীমা অনুমোদন।
  • বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সরবরাহ ক্ষেত্রের সঙ্গে যু্ক্ত প্রকল্প সংস্হাগুলিকে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বাছাই করা হবে।

) ক্ষেত্রের স্থায়িত্ব

  • কোনও নিয়ন্ত্রক সম্পদ নেই।
  • জেনকোস-এর সময় মতো অর্থ প্রদান।
  • ভর্তুকির জন্য ডিবিডিটি : স্মার্ট প্রিপেড মিটারস।

২. কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে বিদ্যুৎ বন্টনের বেসরকারীকরণ করা হবে। বিদ্যুৎ  সরবরাহ এবং বন্টনের সন্তোষজনক কর্মক্ষমতা ও আর্থিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে বিদ্যুৎ  দপ্তর/ইউনিটগুলির বেসরকারীকরণ করা হবে। গ্রাহকদের আরও উন্নত পরিষেবা প্রদান করা হবে এবং  ব্যবস্থাপনার উন্নতি সাধন ও বিতরণ ক্ষেত্রে আর্থিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে। সারা দেশে অন্যদের ব্যবহারের উপযোগী  একটি অনুকরণীয় মডেল প্রদান করা হবে।

) পুনর্নির্মাণযোগ্য কার্যকরী বিস্তর প্রভেদ তহবিল প্রকল্পের মাধ্যমে সামাজিক পরিকাঠামোয় বেসরকারী বিনিয়োগে জোর হাজার ১০০ কোটি টাকা 

কেন্দ্র এবং রাজ্য/স্বয়ংশাসিত সংস্থা দ্বারা পরিচালিত পুনর্নির্মাণযোগ্য কার্যকরী তহবিলের মোট প্রকল্পর অর্থের ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করবে সরকার। অন্যান্য ক্ষেত্রের জন্য পুনর্নিমাণযোগ্য কার্যকরী বিস্তর প্রভেদ  তহবিলে বর্তমান ২০ শতাংশে সরকার এবং রাজ্য অথবা স্বয়ংশাসিত সংস্থাগুলি থেকে সাহায্য অব্যাহত থাকবে। মোট মূলধনী ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ১০০ কোটি টাকা। প্রকল্পগুলির প্রস্তাব জমা দেবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রক/রাজ্য সরকার/স্বয়ংশাসিত সংস্থা।

মহাকাশ ক্ষেত্রে  :

মহাকাশ ক্ষেত্রে কাজকর্মের জন্য বেসরকারি অংশীদারিত্বে জোর।

ভারতীয় বেসরকারি সংস্থা মহাকাশ ক্ষেত্রের যাত্রাপথে সঙ্গী হতে পারবে। উপগ্রহ উৎক্ষেপণ এবং মহাকাশ ভিত্তিক পরিষেবা ক্ষেত্রে অংশ নিতে পারবে। বেসরকারি সংস্থাগুলির জন্য পরিবেশ নিয়ন্ত্রক ভবিষৎ নীতি প্রণয়ন করা হবে। বেসরকারি সংস্থাগুলিকে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা  ইসরোর বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে যাতে তারা দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে। ভিন গ্রহ অন্বেষণ, মহাকাশ অভিযান  সম্পর্কে ভবিষৎ পরকল্পনায় বেসরকারি সংস্থার দরজা খুলে দেওয়া হবে। মুক্ত ভৌগলিক স্থান সংক্রান্ত নীতিতে প্রযুক্তি নির্ভর সংস্থাকে দূর নিয়ন্ত্রিত সংবেদী ব্যবস্থা বা রিমোট সেন্সিং এর তথ্যপ্রদান করা হবে।

গুগল ম্যাপের উপর নির্ভরতা কমাতে ইসরো তৈরি করছে দেশীয় ম্যাপিং পোর্টালঃ

দেশের রাস্তাঘাটের ঠিকানা পেতে গুগল নির্ভরতা কাটাতে চায় ভারত। বিদেশি সংস্থার উপর ভরসা না রেখে, ‘আত্মনির্ভর’ হতে উদ্যোগী ইসরো। দেশের একটি সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে গুগল ম্যাপের একটি দেশজ প্রতিদ্বন্দ্বী বানানোর কথা ভাবছে তারা। শুক্রবার সংবাদসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে এই তথ্য। গুগল ম্যাপের মতোই দেশের মানচিত্রের পুঙ্খানুপুঙ্খ সন্ধান দেবে গুগল-এর এই প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাপ। পার্থক্য এটুকুই যে এই নতুন অ্যাপ হবে সম্পূর্ণ ভারতীয় প্রযুক্তিতে এবং ভারতে তৈরি।

এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই দেশের একটি প্রযুক্তি সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা স্বাক্ষর করেছে ইসরো। সংস্থাটির নাম ম্যাপমাইন্ডিয়া। গুগল ম্যাপের মতো ম্যাপ তৈরি করার জন্য যে জিওস্প্যাচিয়াল পরিষেবা ও প্রযুক্তি দরকার তাই বানানোর কাজ করে এই ম্যাপমাইইন্ডিয়া। এই প্রযুক্তির কাজ হল ভূপৃষ্ঠের উপরে থাকা যে কোনও বস্তু সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ। কেন্দ্রের মহাকাশ গবেষণা বিষয়ক দফতরের সঙ্গে এই সমঝোতা স্বাক্ষর করেছে ম্যাপমাইইন্ডিয়ার সংস্থা সিই ইনফো সিস্টেম প্রাইভেট লিমিটেড। নেটমাধ্যমে ইসরোর সঙ্গে তাদের নতুন উদ্যোগের কথা জানিয়ে সংস্থার সিইও রোহন বর্মা জানিয়েছেন, ‘‘আর ভারতীয়দের গুগল ম্যাপ বা গুগল আর্থের উপর নির্ভর করতে হবে না। এবার দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি সমাধানই ভারতবাসীকে জিওস্প্যাচিয়াল পরিষেবা পেতে সাহায্য করবে।’’ নতুন এই উদ্যোগ ভারতের আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার প্রয়াসকে আরও মজবুত করবে বলে জানান ভার্মা।

আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের দৃষ্টি রয়েছে ভারতকে একটি স্বনির্ভর দেশ হিসাবে দেখার। স্বাধীনতার ৭৫তম  বছরে এসে দাঁড়িয়ে নাগরিকরা একত্রে হাত মিলিয়ে এবং স্থানীয় ব্যবসায়কে উত্সাহিত করে এই পথে পরিচালিত করতে সহায়তা করতে পারে। ভারতবর্ষ কে সম্পূর্ণ রূপে আত্মনির্ভর করে তুলতে পারে।

তথ্যসূত্রঃ-

১) চট্টোপাধ্যায় বঙ্কিমচন্দ্র,আনন্দমঠ।

২) ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ, স্বদেশী সমাজ।

৩) Press information bureau Kolkata 16 May 2020

৪) আনন্দবাজার পত্রিকা (অনলাইন) ১২ই ফেব্রুয়ারি ২০২১।

(লেখক হলেন গবেষক, মুর্শিদাবাদ জেলা ইতিহাস ও সংস্কৃতি কেন্দ্র এবং এমএ (বাংলা বিভাগ) রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। মতামত এবং বিশ্লেষণ লেখকদের নিজস্ব)।